Thursday, July 9, 2009

মৃণাল

মঞ্জুশ্রী রায়চৌধুরী (বুলবুল)

আজ পদ্মকথা কই। নষ্টকথা, নষ্ট-অনুভব, সারাটা জীবনে যে কত নষ্টদিন দিল....তাই কাছেপিঠে ভাল কিছু পেলেই এখন আঁকশী আঁকড়ে ঝটাস্ টেনে ধরি। খুবই কাছের সময়সীমার এই আপাত সাদাসিধা কথা জানিনা কারুর মনোযোগে বসবে কিনা, তবে আমার কাছে তা স্বর্ণসুষমা মাখা। ভূমিকা ছেড়ে এবার তা’লে আসলে কথায় যাই।
আমার মন কখনো ঈশ্বরমুখী ছিলনা এবং হোক্ য়ে সেটা চাইতামও না। কিন্তু অচেতন, অহংকারী আমাকে তিনি এমন নাড়া দিলেন, যে এতকালের পুরুষকারে বিশ্বাসী নাস্তিক আমি পপাতধরণীতল ও আজ আস্তিকস্য আস্তিক।........তিনি যতদিন না চান, ততদিন আমরা বোধহয় একটা পাও ফেলতে পারিনা। এ বিশ্বাস আমার বসে গেছে মনে আস্টেপৃষ্ঠে। এটা বুঝেছি যে- যা যখন হবার তাই-ই তখন হয়, আমি শুধু চেষ্টাই করে যেতে পারি। যেমন অর্কুটে বেশ কিছুদিন থেকে একজন মানুষ, নাম কান্তি (যার প্রোফাইল পিকচারে ছিল রাধা-কৃষ্ণর ছবি) ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিযেই যাচ্ছিল আর আমি ইগনোর করছিলাম দিন-প্রতিদিন। আস্তিক আমি মানেই যে ঈশ্বরে মজে আছি এ’ তো নয়। আমার এখন নিজের দিকে মন। লিখছি- লোকে পড়ুক, কোরিওগ্রাফি করছি- মানুষ জানুক, সমমনস্ক জনের সঙ্গে ২/৫টা মন-লোভানো কথা কই- এই ধরণের ইচ্ছে ছিল এলোথেলো- হাজার। তাছাড়া আরো যে কি ভাবছিলাম কে জানে......মোটকথা ইচ্ছে ছিল না। সবসময়ই খুব সীমার মধ্যে রাখতে চেয়েছি আমার যোগাযোগের ক্ষেত্র। হলেই বা Scrap কথা, আমি কিছুটা হলেও তো চিনি নিজেকে; ঐ ‘খাজা খাচ্ছি, এবার গজা খাব’- য় আমার মন ওঠে না মোটে। তাই সঠিক জনকে খোঁজা, তাই দেখেও না দেখা চুপচাপ থাকা। যোগাযোগ খালি বাড়িয়েই যাব অথচ পালন করতে পারবো না- এ চাইনি, চাইও না। যাই হোক্- সে কান্তির কিন্তু কোনো ক্লান্তি ছিল না, অভিমান ছিল না যোগাযোগের নানান ধরণকে কাছে টেনে মনোয়োগে আসবার। অবশেষে তাঁকে এড়াতে লিখলাম- ‘ তোমার নাম কান্তি, অথচ কান্তশ্রীকে আড়ালে রেখেছ কেন ভাই? তোমার প্রোফাইলে দেখেছি 363 বন্ধু তোমার। বন্ধুধনে বেশ ধনী তো তুমি..... আরো কেন? আমি আসলে বন্ধু বাড়ানোর ব্যাপারে খুব হিসেবী। যাতে স্বীকৃতি দেবার পর সকলের প্রতি আমার দায়বদ্ধতাকে সামলে চলতে পারি, সেটা দেখি। তাই দ্বিধা, তাই অপেক্ষায় রাখা.........ব্যস। তোমার সঙ্গে এমন আপাত অমিল মানুষের বন্ধুত্ব….‘ ইত্যাদি-প্রভৃতি গা বাঁচানো, মন এড়ানো ফুলঝুড়ি কথার নানান মারপ্যাঁচ।
পরে লেখাটা দেখতে গিয়ে ভাবছি, এই টাইপের Scrap আমার কাছে এলে কি করতাম? এমন আপাত সরলতার সহজপাঠ হাতে ধরা আত্মম্ভরী মানুষকে ফের কি লিখতাম? সন্দেহ। কিন্তু ক্লান্তিবিহীন কান্তি জানে মিথ্যে অহংকারের ফুটো সারানো না হলে সব প্রাপ্তি সে ফাঁক গলে হাওয়ায় মিলায়। তাকে পেতে হবে, যা সে চায়। তা রাজৈশ্বর্য্যই হোক্ কিংবা বায়বীয় বন্ধুত্ব। positive, positive. একেই বলে positive ভাবনার positive দুর্বার জন। positive approach নিয়ে তাই কান্তি এল তত্ক্ষণাত্। সে লিখল-‘tumi ekbar add korey dekho ami jogajog rakhtey pari kina --- i think i shall be able to become good freind of yours. request give a trial.’ হারিপারি আমি শেষে এ্যাকসেপ্ট করে নিলাম তাকে। মনে ভাবলাম- মনোমত না হলে আপনিই সব উধাও হবে এ’ তো জানা হিসেব। সুতরাং...........
এবার দু’দিনের Scrap কথার মধ্যেই বুঝলাম ভদ্রলোক বয়ঃজ্যেষ্ঠ একজন মানুষ। এই বাবদে আমার খারাপ লাগলেও আর তখন করার নেই কিছু। তাঁকে গ্রহণ করা মাত্র তিনি আমার ব্লগ দু’টো ঘুরে এলেন (যা ধরে বেঁধেও অধিকাংশকেই নিতে পারিনি)। তাঁর কম্প্যুটার বাংলা পড়তে পারতো না বলে তিনি অসীম ধৈর্য্যে সব জেনেবুঝে ‘কম্প্যু’কে বাংলায় নিলেন, লেখাগুলো পড়লেন, আমার হেঁজিপেঁজী ভিডিওর সবগুলো দেখলেন ও একটা লিংক নিজের প্রোফাইলের ফেভারিট লিস্টেও রাখলেন। এ’ বাবদে আমি খুশী হতেই পারি, হচ্ছিলামও। স্বার্থসুখে টলোমলো, আত্মগরিমায় উঁচু বুকের ছাতি নিয়ে- একটা কি না কি করেছি-করেছি এমন চোখের কোণে তাকানো অনুকম্পা-টম্পা ভাব। Scrap প্রসঙ্গেই ভদ্রলোক জানালেন ওঁনারও ব্লগ-বিলাস-কথা। অতঃপর দয়া-দাক্ষিণ্যের সময় খুঁজে নিয়ে একদিন আমিও ঘুরতে গেলাম ওঁনার মন-উজাগর-ঘর। এবার তো আমার থ হওয়ার পালা। মানুষটার জ্ঞানের পরিধি, কর্মকুশলতা, জীবনদর্শন ও সারাবিশ্ব ঘুরে নিজেকে এই সময়ের মাপে ছেঁটেকেটে যে আপগ্রেডেশনে নিয়ে রাখা ধরণ, তা জেনে আমি সত্যি বাক্যহারা। প্রথমে য়ে ‘কান্তি’ বলে সম্বোধন করছিলাম, লজ্জায় মরতে-মরতে একধাক্কায তাকে ‘দাদা’-য় নিতে হল। এরপর একদিন দেখি আমার মেল-এ ওঁনার আরেক রিকোয়েস্ট এসে পড়ে আছে চুপচাপ। উনি এ্যস্ট্রোলজার ও আমার হরোস্কোপ দেখে বুঝতে চান কেন আমি আর্ট-এর সমগ্র পরিধিতেই এমন ঘোরাফেরা করি, স্পেশালিটি কি। তো দিলাম, ও উনিও এক বাক্যে এমন একটা জায়গায় আলো ফেললেন, যে আমার বিশ্বাস বসতে বাধ্য হল ভবিতব্যের অস্তিত্বকথায়। উনি আমার সুস্থ দেহমনের কামনায়, বাকী জীবনের সাফল্যের জন্য, চৈতন্যবোধে ঋদ্ধ হবার জন্য একটা মন্ত্র লিংক দিলেন ও বললেন একটা পার্টিকুলার ‘মন্ত্র’ উচ্চারণের কথা। কোনো চাহিদাহীন, প্রাপ্তিহীন, উদ্দেশ্যহীন....... শুধুমুধু..... খালি স্নেহ-স্নেহ হাসি-ঠাট্টা-খেলায়।
এবার বেশ খটমট মন্ত্র নিয়ে আমি তো নাকাল। একে সংস্কৃত তায় তা আবার Roman Harof-এ লেখা। অডিও-ভিডিও লিংক থাকলেও তার আবৃত্তি কি ছাতা বুঝছি সঠিক? মনে উপায় খুঁজছি......... ওমা, ফের দেখি আমার মেল-এ চুপচাপ সেই মন্ত্রপাতা উড়ে এসে আলো করে জুড়ে বসে আছে গা এলিয়ে- পা ছড়িয়ে- আহ্লাদী প্রশ্রয়কথার মতন। অতঃপর ........
আর কি? এবার ঐ সংস্কৃত শব্দকে আয়ত্ব করে নিয়ে ওঁনার বলা মত আবৃত্তি করতে আরম্ভ করলাম। কেন যে এটা দেবভাযা, গভীরভাবে তার আন্দাজ পেলাম আবৃত্তি করতে-করতেই। আমার কিছু হোক বা না হোক্, ঐ উচ্চারণের সঙ্গে নিজেকে যখন জড়াচ্ছি, শোনাচ্ছি, তখন পারিপার্শ্বে যেন ঘন্টাধ্বনি শুনছি, ধূপের গন্ধ উড়ছে হাওয়ায়। কি প্রশান্তি, কি আনন্দ-আবিষ্ট অনুভব আর কি যে একটা মন-ভাল-করে-রাখা অবস্থার ঘেরাটোপে জড়িয়ে যাচ্ছি, তা বলার নয়। আবৃত্তিতে সুন্দর করে সুর বেঁধে নিয়েছি নিজের হিসেব মত- যা আরো মনোগ্রাহী করে তুলেছে মন্ত্রকে। বহুদিন থেকে নাচে তো এমনই কত বন্দনা, স্তুতি ব্যবহার করছি, তাই সুর লাগাতে অসুবিধে হল না। এখন আমি হরিণ, এখন আমি ফড়িং, হাল্কা হাওয়ায় উড়ছি। দিব্যি দু’বেলা মন্ত্রআবেশে মস্ত্। অথচ ঐ মৃণালকান্তি (গোটা নামটা পরে জেনেছি) মানুষটা নির্বিকার, আনমনা ও ফের অন্যবন্ধু খোঁজে। মনভরা Positive energy নিয়ে, বিলোতে বেড়িযেছেন সর্বধর্মজনে। বন্ধুজনের হাতে মৃণাল তুলে না দেওয়া অবধি লোকটার স্বস্তি নেই। মানুষের মনের বাঁকাচোরা নষ্ট অলিগলির- অলিখিত, স্ব-নিয়োজিত সাফ-সুতরো-জন। ওঁনার কাছে শিখলাম- অহংকার শব্দটা কত ফাঁপা, কতখানি আত্মধ্বংসী তা। এমন কি আমিও Positive vibration- এর আওতায় এসে পড়াতে, তার অর্থও স্পষ্ট হল বেশ। বুঝি, বুঝি, সবই বুঝি, কিন্থু জীবনচর্চায় তার ইমপ্লিমেন্ট? হয়নি। হয়তো হবে কখনো...... সেই চেষ্টাতেই তো দাদার কথা মত উচ্চারণ দিয়ে ধুচ্ছি আপন বোধ, চেতনা, ফুটোবুকের অহংকার.......দিনরাত। বয়সকে জব্দ করতে পারা স্বার্থহীন মৃণালকান্তি, অহংকার অসুরকে বন্দী করতে পারা মৃণালকান্তি, ‘বন্ধুত্ব’ কথাকে যাত্যার্থ্য দেওয়া নিরভিমানী মৃণালকান্তি বেশ আছেন নিজপুরে অন্যরকম মস্ত্। তবে? কে বলেছে পৃথিবী শুধুই মন্দ ও স্বার্থজনে ভরা? এমন কিছু কান্ত মানুষ আছেন বলেই না শ্রান্ত পৃথিবীতে আজো পদ্মগন্ধ ওড়ে, মৃণাল ফোটে, ভ্রান্তি ভোলে বুলবুল।

1 comment:

Anonymous said...

kichhuta bariye lekha hoyechhey. Antoto ami tai mone kori -- from mrinal