Saturday, March 7, 2009

অসুখের দোসর


গাছ, মাছ, জবাফুল, হাস্নুহানা, খোলামাঠ, মাঠে বকের উড়াল, জুঁই-বেলী-কামিনীর সুগন্ধ নিয়ে ‘নির্জনে’ কাঁদে একা। কি করবো? ঈশ্বর কি আমাকে ভোগ দিয়েছেন যে তোকে দু’বাহুতে জড়াবো? তাই তুই একা। ধারেপাশে বসত তো দূর, জন-মনুষ্যি, কুকুর-বিড়াল কিচ্ছু ছিল না সেদিনও। শুধু গরু চরতো আর মোষের পিঠে চড়ে দূর পাড়ার কোনো স্কুল পালানো পাগল ছেলে যেত হেলেদুলে। কত সময় বর্ষার জমা জল, মোষের খুরের আগায় লেগে চিকমিকিয়ে ঝলসে উঠতো রোদের রঙ মেখে। আহা, কি নয়নশোভন না ছিল সেই মেঘলা দুপুর দিন। নানান পাখীর গানে, শামুকের নিরুত্তাপ হাঁটায়, প্রজাপতির ডানায় তুই ভোর নামতে দেখতিস্। হয়তো ঘুমতে যেতিস্ বনবিড়ালের বা শেয়ালের কোরাস গান শুনে। ‘নির্জনে’ রে, আমি যে রাতেও খুব কম থেকেছি তোর কাছে তাই ঠিকটা জানিনা আজও। তবে তোর আগে-পিছে-কোলে-কাঁখালে-ফাটলে-গর্ত্তে সাপগুলোকে নিয়ে যে ব্যোম ভোলানাথ হয়ে মস্ত্ থাকতিস্, তার হদিশ পেতুম বেশ। সাপখোপেরা তো আর মানুষ না যে ভেক ধরে লোক ঠকাবে; মাঝেমধ্যে তাদের খোলস ছাড়তে হয় আর সেই ফেলে যাওয়া ‘বেশবাস’ পড়ে থাকতো তোর চাতালে, চৌকাঠে, পাঁচিলের ধার ঘেঁষে।
‘মুস্কান’ আমার কুড়িয়ে পাওয়া কচ্ছপ ছানা ছিল। তুই কিন্তু ও বেটাকে নিয়ে খুব আহ্লাদে গলে গলে পড়তিস্। বলতে হয়না, ও’সব ঠিক বোঝা যায়। আরে বোকা, আমিও যে তোর মত একা। কোথাও না কোথাও তো মিলজুল হবেই। তাই কিনা? ‘ভালবাসা’ বড় শক্ত কথা রে। ও ভুল কখনো করিস্ না। অবশ্য এখন আর বারণ করে কি হবে? ভুল তো সেই করেইছিস্। আমার ‘মুস্কান’-কে (তোরও) তোর মাটীতে সেঁধিয়ে নিয়েছিস্। এক বেভ্ভুলো, অপোগন্ড দেখভাল করনেওয়ালা ছেলেকে ভাঁওতা দিয়ে দিব্যি............। ভাবিস্ কিছু বুঝিনা – না? ওরে আমিও য়ে তোরই মত ভালবাসার জনকে নিয়ে এ’ভাবেই নিশ্চিন্তির গর্তে সেঁধিয়েছিলাম। আমি বুঝবো না? বেশ। ভাল হলেই ভাল। চিন্তা করিস্ না। আমি তোর কাছে আসতে চেষ্টা করছি খু-উ-ব। কিন্তু ঐ যে। যারা মারলো, তাদেরই খাতির-যত্ন-আঁচানো-ছোঁচানো...........কোথা দিযে যেন কেটে যাচ্ছে দিন। এ’ আমার বিধিলিপি রে। ঈশ্বর আমায় বিনি সূতোর বাঁধনে নাচাচ্ছেন। তোর সদ্য বিকশিত অন্তরের নতুন গন্ধ আমার পাওনা নয়। আর কিনা তোরও হল তাই? আমার পরিচর্যাও তেমন করে তোর তো পাওয়া হল না। হয়তো কোনো পাপের সাজা এ’। এর ক্ষয় না হওয়া অবধি তুই আমি এই বিচ্ছেদেই থাকবো মনে হয়। ক্ষতি কি? এও তো প্রেম। এই যে জ্বালা নিয়ে, ‘আসবো-আসবো’ ভাবা নিয়ে, নাইবো-খাবো একসাথে এমন আশা নিয়ে কাটছে দিন, এলে তো তা ফুরিয়েই গেল। তাইনা? চুপ ’নির্জনে’ চুপ। এখন চুপ করে শো, আমি আলো নেভাচ্ছি। যেতে হবে সোনা। ফের আসবো বুঝলি? ‘বিপর্য়যে’ অনেক কাজ। তাড়াতাড়ি সারতে হবে সব। আর পিছু টানিস্ না রে তুই। আমার ঘুচু-মুচু-শুচু-লুচু, গুগুলি-পুকুলি, আংকুটি-পাংকুটি..............চু-প। আসবো, আসবো, আসবো। হল?

No comments: