Saturday, March 7, 2009

সুখ


কারুর জন্য, কিছুর জন্য বাঁচার মধ্যে যে কি সুখ তা কি বলি। আর পাপী-তাপী-আত্মআদুরী-বিপদলোভী মানুষগুলো কিনা আমার সে সুখ কাড়ার চেষ্টা করবে আর জিতেছি ভেবে বগলবাদ্য করবে তা হতে দেওয়া যায় নাকী? পারবেই না, হারবো না আমি কিছুতেই।
আমার সেজেগুজে একলা পড়ে থাকা বাড়ীর নাম 'নির্জনে'। খুব যত্নে সাজিযেছি তাকে ভালবেসে, মনের মত করে। আমি সেখানে যাই মাঝেমাঝে। ঘরগুলোরও আমি নাম দিযেছি আমার ব্যবহারের ছন্দ বুঝে। য়েমন 'মির্চাং' হল সেই ঘরটি যেখানে আমি রিহার্সাল করি, নাচ শেখাই, নিজেও নাচি। তার পাশেই একটা প্রায় স্বপ্নের মত কাঁচ-ঘর আছে যার অনুষঙ্গ নানান পাখীর। সিঁডি় উঠে গেছে এরই গা ঘেঁষে। ঘর থেকে ঐ কাঁচ-পাখী ভেদ করে যায় দৃষ্টি অফুরান, সিঁড়ি পেরিয়ে দূরে- । সামনে আদিগন্ত বিশাল বড় মাঠ। না, না আমার না। ও সরকারের লিটিগেটেড প্রপার্টি। তা' সে যাই হোক্, আমি তো gainer. পাখী-পাখী ঘর আর সামনে উধাও মাঠ, এই ঘরের তাই নাম রেখেছি 'উড়াল'। পাশেই আছে টয়লেট- 'অধরা'। গ্যারাজে যাবার রাস্তাটুকু সেতুর মতন ঢালু করে গড়েছি আর তার তলা খুঁদে নিয়ে যে পন্ড মত হযেছে, তাতে জল রেখেছি, মাছ ছেড়েছি মৃগেল, বাটা, তেলাপিয়া, কালবোশ। এ‘ গ্যরাজের নাম- ‘আনমন‘। পাশে একচিলতে জমিতে ‘ফুলে-ফুলে ঢলে-ঢলে........ ‘ চেয়েছিলাম। কিন্তু উত্তরমুখী বাড়ী তো। তাই আমার চেষ্টার কসুর না থাকলেও তেমন ফুলেল দিন নেই। এ আমার নীচের তলার হিসেব। ওপরে উঠতেই যে ড্রইং স্পেস, তার নাম- ‘নিটোল‘। কেন তা জানিনা। আমার মনে হযেছে, ব্যস্। একটি মিউজিক রুম তার পাশেই। নাম ‘ভেঁপু‘। এটির মেঝে-দেওয়াল-আসবাব সব কাঠের ও সাজানো রুরাল-শিল্প অনুসারী। মুখোমুখি য়ে শোবার ঘর, তার নাম রেখেছি ‘জিরেন‘। পাশেই টয়লেট-‘পিছুটান‘। রান্নাঘর আলাদা করে নেই তাই সে নামহারা। আমার ড্রইং স্পেস-এর সঙ্গেই এই ওপন কিচেন। ওপরে উঠতে য়ে দোছাতি, তারও নাম জুটেছে-‘খড়কুটো‘। বেচারী কিচেন।

Any way, এ‘গুলোই তো সুখ। এইগুলোই বেঁচে থাকার ইচ্ছে, আমার সম্পদ, আমার আত্মআবেশ। ‘নির্জনে‘ গেলে, য়ে ঘরে যখন যাই, তখন সে‘ নাম ধরে তাদের ডাকি, বসি, গপ্প করি আর একদিন করে ক্লাশও করি। বাড়ীর পিছনে কেয়ারটেকারের ফ্যামিলী নিয়ে থাকার জায়গা আলাদা। তার মেযেটি ৩ বছরের। নাম -‘ঈশা‘।ঐ 'ঈশা' যখন 'পিচি' বলে ডেকে হাঁকে- 'দরজা খোলো, আমি, আমি।' তখন কি য়ে স্নেহবর্ষণ শুরু হয় বুকে........। সুখ, সুখ। এর নামটাও সুখ। ও কেউ না। কোনোদিন ওর পর্ণকুটির ছেড়ে আমার অট্টালিকায় মন যাবেনা ওর। তা'তে কি? ওর ঐ ও'টুকু মনোয়োগই য়ে কি সুখ দিচ্ছে আমায়। অন্য মেয়েদের নাচতে দেখে সেদিন বললো- 'পিচি গো, আমায় একতা ঝুমুর দেবে?' অন্যমনস্ক আমি প্রথমেই ঠিক বুঝিনি কি ওটা। জিঞ্জেস করলাম- 'কি সেটা? কানে পরে?' বললো- 'ঝুমুর গো ঝুমুর, পায়ে পরে না'! হাঁদা আমি ভাবলাম, হয়তো নূপুর বলছে। ভাবলাম, সর্বত্র তো এ' জিনিস মেলে না, কোনো লোকাল মেলা হলে নাহয় খুঁজে-পেতে দেখা যেত। তাই একটু সময় নিলাম ওর কাছে। বললাম- 'এখুনি হবে না বাবা, দু/দশদিন বাদে আনবো।' 'বিপর্যয়ে' ফিরে (এখানেই আমি থাকি। কেন এ' নাম তা অন্য প্রসঙ্গ। তবে 'নির্জনে'-র মত বাড়ীর গাযে এটা খোদা নেই, ওটা আমার দেওযা নাম আমার মনেই আছে। অন্য কোনো সময় এটা লিখব নাহয।) নবুকে ফোন করলাম।' 'এনে দিতে পারবি?' নবু বললো-'পাড়ার ঐ যুব মেলায় একবার দেখতে পারো, তবে আমার মনে হয তোমার ছাত্রীদের নাচতে দেখে ঘুঙুর চায়নি তো?' আমি এবার বুঝে গেলাম ও ধরতে পারলাম রিদমটা। কাল 'নির্জনে' গিয়েছিলাম, সঙ্গে কিছু ঘুঙুর আর দড়ি নিয়ে। বসে-বসে বাঁধলাম ঘুঙুরগুলো আর অপেক্ষায় থাকলাম- মেযে স্কুল থেকে ফেরে কখন। ৩-টে নাগাদ ফিরলো, ও যথারীতি- 'পিচি গো পিচি, দরজা খোলো, আমি, আমি।' দরজা খুলতেই মেয়ে দেখি একমুখ হাসি নিয়ে ভেতরে আসতে পা বাড়িয়েছে। ওর মা এসেছে পিছনে- 'কি মেযে দেখ দিদি, এসেই চলে এল দৌড়ে, জামা-জুতো কিচ্ছু ছাড়েনি। অন্যজামা পরে খেয়ে-দেযে আসবি নাহয়- চ'। সেই যাওয়া সন্ধ্যা ৬-টাতেও এলো না যখন, তখন পিছনে গিযে দেখি মেয়ে ঘুমচ্ছে। তারপর জাগলো ঠিকই, কিন্তু যে'ক্ষণ ঐ তিনটের সময় তৈরী হয়েছিল, তা আর হল না। ঘুমিয়ে মেয়ে নদগদে। হাজার ডাকেও না আসে, না হাসে। ব্যর্থ আমি ঘুঙুরটাকে রেখে দিলাম ও ফের এমনই কোনো এক ক্ষণের অপেক্ষায় ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে চলেও এলাম। এর থেকে এটা বুঝলাম যে যখন জীবন যা সুখের স্বর্ণকণা-কুচি দিচ্ছে, তা' তুলে নাও তক্ষুনি। পরের জন্য অপেক্ষায় সে'সময়, সে'ক্ষণ আর তৈরীই হয়না। শুধু আমার চাওয়ার তীব্রতা যেন অন্য কারুর ক্ষতির কারণ নাহয এইটুকুই দেখার, ব্যস্। আমার চেনা 'সুখগুলো' এমনই।

1 comment:

Unknown said...

[red] [b] সুন্দর farmhouse খুব ভালো সাজিয়েছ । [/red] [/b]